আর্তনাদ
-কাজল দাস
হয়তো তোর সুখের আঙিনা-তে
দক্ষিণ বাতাস আকাশ ছুঁয়ে থাকে,
আমার আকাশ এঁদো গলি ধরে-
কালিঘাটের বস্তিতে পা রাখে।
তোর বারণ ভাঙা উন্মুক্ত আকাশ
তুই তো এখন সোনা রঙের পাখি,
আমার বুকে অসম রক্ত ক্ষরণ
খুব সহজে আতর দিয়ে ঢাকি।
তোর শয্যা একটি মাত্র মানুষ,
আদর মেখে ঘুমিয়ে থাকবে বুকে।
আমার শরীর চিল-শকুনের রাতে
সুখ খোঁজে রোজ বিষাক্ত অসুখে।
তোর সূর্য নতুন সকাল দেখে-
চুমুক দেওয়া উষ্ণ চায়ের কাপে।
তখন আমি দেহের ক্লান্তি ধুয়ে
পোড়াই বিবেক নিজের অনুতাপে।
আলতা পরা আলতো পায়ের ছোঁয়া,
শ্বেত পাথরের বুকে জাগে সুখ।
আমি নগ্ন পায়ে ঘর থেকে বেরোলে
ঘৃণার চোখে ফেরায় সবাই মুখ।
লালচে রঙা সোহাগী শরীরে
আছড়ে পড়িস যখন স্বামীর বুকে,
আমি তখন সস্তার মেকআপে,
রক্ত ঝরাই অন্য কারোর সুখে।
বন্ধু স্বজন অনেক প্রিয়জন,
বুক বাড়িয়ে তোকে কাছে ডাকে।
আমায় দেখে চৌরাস্তার মোড়ে
নিজের বাড়ি মুখ লুকিয়ে থাকে।
তুই তো জানিস ঘরছাড়া আজ আমি
যার সঙ্গে ঘর বাঁধবার আশে।
গভীর রাতে সেও খিদের জ্বালায়,
প্রেম কিনতে আমার কাছে আসে।
বুকে ধরে আমার এঁটো শরীর
খুঁজে ফেরে বিকিয়ে যাওয়া মন।
আঁচড় কেটে আমার শিরদাঁড়ায়
বৃষ্টি মাকে দুহাতে সারাক্ষণ।
আমিও তখন সকল ব্যাথা ভুলে
এক নিমিষে অতীতের বুকে ছুটি,
দুরন্ত প্রেম জ্বলন্ত চৌকাঠে,
গোলাপ রঙের আগুন হয়ে ফুটি।
ক্ষনিক চাওয়া ক্ষনিক পাওয়ার মাঝে
হারিয়ে গেছে নিজস্ব পরিচয়।
তুই তো জানিস গাছের ছায়ায় বসে
নষ্ট হওয়ায় ছিল আমার ভয়।
সেদিন যদি নষ্ট হতাম আমি
কি আর এমন ক্ষতি হতো আর,
তোর মত আমিও আজ পেতাম
স্বামী সন্তান সুখের সংসার।
তবে কেন আজ নষ্ট মেয়েই হলাম?
কি কারণে এমন পরিনাম?
তোর সিঁদুরের বিদগ্ধ সৌরভে
আমাকেই কেন দিতে হলো দাম?